শিরোনাম
বিশেষ সম্পাদকীয় | ০২:৪৪ পিএম, ২০২১-০১-২৪
মিজানুর রহমান চৌধুরী :
খবর জানার আগ্রহ মানুষের অন্যতম আদিম প্রবৃত্তি। বছরের পর বছর জেলেরা নদীতে মাছ ধরেন। তা কোনো খবর নয়। একদিন শোনা গেল ঝোড়ো হাওয়ায় নৌকাডুবিতে কয়েকজন মৎস্যজীবী ও মাঝি মারা গেছেন। সেটি একটি সংবাদ বা দুঃসংবাদ। দশ গ্রামের মানুষের তা জানার আগ্রহ। কীভাবে ঘটনাটি ঘটল, কতজন মারা গেলেন, কী তাঁদের পরিচয়, প্রভৃতি নানা প্রশ্ন মানুষের মনে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে সেসব প্রশ্নের উত্তর থাকে।
কিন্তু আধুনিক সংবাদপত্র ঘটিত বা সংঘটিত বিষয়ের বিবরণই শুধু পরিবেশন করে না, তার ভূমিকা বিশাল ও বিচিত্র। জীবন ও জগতের সবকিছুই তার উপজীব্য। জীবনের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো গুরুতর বিষয়ের দার্শনিক ভিত্তি যদি শক্ত না হয় তাহলে তা দিয়ে মানুষের কল্যাণ হয় না। সংবাদপত্রের দর্শন রয়েছে এবং রয়েছে সাংবাদিকতার নৈতিক ও দার্শনিক ভিত্তি।
ঔপনিবেশিক সময়ে সংবাদপত্রকে লড়তে হয়েছে স্বাধীনতার জন্য বা মাফিয়া রাজনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে। সামন্তবাদী সমাজে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সমাজে তাহলে কি সংবাদপত্রের কাজ কমে গেছে ? তা নয়; বরং বেড়েছে। একটি সমাজ গঠনে সংবাদপত্রকে এখন বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই করতে হয়। ব্যক্তির মানবিক অধিকার এখন কিছুমাত্র কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একদিকে সর্বশক্তির অধিকারী রাষ্ট্র, আরেক দিকে একজন সহায়সম্বলহীন দুর্বল মানুষ। সেই দুর্বলের অধিকার যখন হরণ হয় তখন তাঁর পাশে দাঁড়ায় সংবাদপত্র। সংবাদপত্রকে লড়াই করতে হয় সবচেয়ে শক্তিধরের সঙ্গে। সেজন্য নিজেকে জানতে হবে। তিনি কিভাবে প্রবল পরাক্রান্ত শক্তিকে মোকাবেলা করবেন ? তাঁর নৈতিক অবস্থান কি হবে ? মানুষের চেতনার মান উন্নত ও শাণিত করাও সংবাদপত্রের অন্যতম দায়িত্ব।
কিন্তু সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা এখন মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। মাফিয়া স্বার্থকে আঘাত করা এখন একটি বড় দায়িত্ব। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা এখন মাফিয়াদের গোলামিতে ব্যস্ত । চলছে দাসত্বের সাংবাদিকতা। যে সংবাদপত্র বা সাংবাদিকের নৈতিক অবস্থান বা দার্শনিক ভিত্তি শক্ত, জনকল্যাণে সেই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা সমাজ বিকাশের প্রধান অন্তরায়। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং ধামাচাপা প্রদানকারী নেতারা জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ায় । তাই এবার সময় এসেছে সংবাদপত্রকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া এবং সাংবাদিকদেরকে পেশা বিহীন করার মাফিয়া চক্রান্তের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই চালানোর। সত্যের পক্ষে কঠোর লড়াই ছাড়া এদেশের সাংবাদিকতা কিংবা রাজনীতি টিকবে না। মাফিয়া সাংবাদিকদের বর্জন করুন । দামী কাপড় দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা বানাতে হবে, দেশপ্রেমিক জনতাকে নিস্ক্রিয় করা যাবে না, সাথে সাথে দয়ামায়াহীন অভিনেতারাও চিহ্নিত হবে। মুক্তির আলো আসবেই। আমাদের সফলতা নিশ্চিত, শর্ত মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা বিরোধী কঠিন, কঠোর সংগ্রাম ।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2021 Dainik Amader Coxs-bazar | Developed By Muktodhara Technology Limited