শিরোনাম
আমাদের ডেস্ক : | ০১:১২ এএম, ২০২১-০৩-৩১
দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনার বিস্তার। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। ইতোমধ্যে আক্রান্তের হার সকল রেকর্ড ভেঙেছে।
গত সোমবার আক্রান্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ১৮১ জন।
গতকালও এ সংখ্যা ৫ হাজার অতিক্রম করেছে। এ মুহ‚র্তে অন্তত ২৯টি জেলা করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এসব জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, নওগাঁ, রাজশাহী ইত্যাদি।
তবে রোগী বৃদ্ধি ও শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে। এরপর ঢাকা ও খুলনায়। এদিকে টানা দু’দিন ৫ হাজারের বেশি রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি সত্তে¡ও অধিকাংশ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
তাদের কাছে সবকিছুই যেন স্বাভাবিক। বেশিরভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্ক,
নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। বিদেশফেরতদের যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিনে না রাখায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এমনকি জনগণকে সচেতন করতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন প্রচারণাও চোখে পড়ছে না। যদিও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শুরু করা হয়েছে ঢিলেঢালা অভিযান।
যদিও অনেক স্থানে দেখা গেছে, পুলিশের মুখেও মাস্ক নেই। তাই দেশব্যাপী সচেতনতা বা স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললেই চলে।
আর তাই সংক্রমণ পরিস্থিতি কোথায় ঠেকবে বা করোনায় দেশের কী অবস্থা হবে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শতভাগ মানুষ মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে না চললে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা দুরুহ হয়ে পড়বে।
তাদের মতে, যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে বিপদ আরো বাড়বে।
হঠাৎ করে ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন। তাই আরো এক মাস আগেই সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল।
যদিও ইতোমধ্যে সরকার আংশিক লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে ১৮টি নির্দেশনা দিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে ব্যবস্থা নিলে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে হয়তো পড়তে হতো না। অনেকের মতে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং বিদেশ ফেরতদের যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিনে না রাখায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
একই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে টিকা নেয়ার পাশাপাশি আগামী দিনগুলোয় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কার্যক্রম চালাতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও এ মাসের শুরু থেকেই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দিয়েছেন। এমনকি কঠোরতার কথাও বলেছেন। যদিও বাস্তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানের কথা বললেও সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তব কোনো পদেক্ষপ না নেয়ায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বলেও মত দিয়েছেন অনেকে।
দেশে এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কয়েকশ’ গুণ বেশি। এমন তথ্য জনগণের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার পদক্ষেপ নিলেও পথ-ঘাট, গণপরিবহন, কিংবা বিনোদনকেন্দ্রসহ সবখানেই যেন স্বাস্থ্যবিধি মানার অনীহা।
সূত্র মতে, টানা ৯ দিন ধরে দৈনিক সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
গত দু’দিন যা ছিল ৫ হাজারেও বেশি।
এর মধ্যে গত ২৩ মার্চ তিন হাজার ৫৫৪ জনের, ২৪ মার্চ তিন হাজার ৫৬৭ জনের, ২৫ মার্চ তিন হাজার ৫৮৭ জনের, ২৬ মার্চ তিন হাজার ৭৩৭ জনের, ২৭ মার্চ তিন হাজার ৬৭৪ জনের, ২৮ মার্চ তিন হাজার ৯০৮ জনের, ২৯ মার্চ পাঁচ হাজার ১৮১ জনের এবং গতকাল ৫ হাজার ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৯৩৭ জন।
এদিকে গতকালও মারা গেছেন ৪৫ জন। গত সোমবারও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন আট হাজার ৯৯৪ জন।
সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরার নির্দেশনা থাকলেও মাস্ক ছাড়াই নির্দ্বিধায় চলাফেরা করছেন অধিকাংশ মানুষ। আর এর জন্য রয়েছে নানা অজুহাত।
এমন অবস্থায় করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শুরু করা হয়েছে অভিযান।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেতনতার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করছেন পুলিশের পক্ষ থেকে।
যদিও গত সোমবার সর্বোচ্চ সংক্রমণের দিনে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনে একসঙ্গে বসা ১০ জন পুলিশের মধ্যে ৪ জনই ছিলেন মাস্কহীন।
এদিকে হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে করোনা রোগী। ঢাকা মেডিক্যাল, কুর্মিটোলা, মুগদাসহ রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও সাধারণ বেডের চেয়ে অতিরিক্ত কয়েকশ’ রোগী। শুধু হাসপাতালে বেড সঙ্কটই নয়; করোনার রেকর্ড টেস্ট ২৮ হাজারেরও বেশি হলেও প্রতিদিন ভোররাত থেকে করোনা টেস্টের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে লাইনে দাঁড়াচ্ছে কয়েকশ’ মানুষ। তবে তাদের বেশিরভাগই টেস্ট করাতে না পেরে করোনার উপসর্গ নিয়ে বাসায় ফিরছেন।
অপরদিকে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর একটি শয্যার জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। করোনার সংক্রমণ ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইসিইউ’র এক একটি শয্যা যেন সোনার হরিণ।
সরকারি হাসপাতালে তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের স্বজনরা রোগী নিয়ে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন কিন্তু কোথাও শয্যা খালি না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালেও আগের তুলনায় আইসিইউ ভর্তিচ্ছু রোগীর চাপ অনেক বৃদ্ধির ফলে খালি আইসিইউ শয্যা প্রতিদিনই কমছে।
খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের পরিসংখ্যানে আইসিইউ শয্যার অপ্রতুলতার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। তথ্য মতে, রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষিত হাসপাতালে মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১০৮টি। তার মধ্যে ১০৪টি শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে মাত্র চারটি শয্যা খালি রয়েছে।
বেসরকারিভাবে করোনা ডেডিকেটেড ৯টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৮৮টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৪৪টিতে। ফলে দুই কোটি জনসংখ্যার এই রাজধানীতে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মাত্র অর্ধশতাধিক আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেডে প্রতিদিন অর্ধলাখের বেশি টাকা বিল পরিশোধের কথা শুনে অনেকে সেখানে রোগী ভর্তি করাতে সাহস পান না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এবং সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে’।
তিনি বলেন, মার্চের ১৩ তারিখে সংক্রমণের মাত্রা উচ্চ ছিল ৬টি জেলায়, ২০ তারিখে দেখা গেছে ২০টি জেলা ঝুঁকিতে আছে। আর মার্চের ২৪ তারিখে দেখা গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার উচ্চ এমন জেলার সংখ্যা ২৯টি।
এতে বোঝাই যাচ্ছে, সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংক্রমণের উচ্চ হার সামাল দিতে এখন স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতি জেলায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে এবং এসব কমিটি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে মিলে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত সোমবার সরকার ১৮ দফা নতুন নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করা। এছাড়া, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে জনসমাগম সীমিত করার নির্দেশনাও রয়েছে এর মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, যেসব জেলায় উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে, প্রয়োজনে সেসব জেলার সঙ্গে আন্তঃজেলা যোগাযোগও সীমিত করা হতে পারে।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী না নেয়া। প্রয়োজন হলে স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপ করা হতে পারে, তবে সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট জেলা তাদের পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে।
এছাড়া বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে।
আমাদের ডেস্ক : : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দ...বিস্তারিত
আমাদের ডেস্ক : : সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্...বিস্তারিত
আমাদের ডেস্ক : : টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথ এর কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত...বিস্তারিত
আমাদের ডেস্ক : : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে। আজ শনিবার স্বাস্থ্য মন্...বিস্তারিত
আমাদের ডেস্ক : : ২৮ অক্টোবর লগ্গি বৈঠা, পিলখানা গণহত্যা, শাপলা চত্বর গণহত্যা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণহত্...বিস্তারিত
আমাদের ডেস্ক : : আগামীকাল বিকেলে বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আ...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 Dainik Amader Coxsbazar | Developed By Muktodhara Technology Limited