চট্টগ্রাম   বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

শিরোনাম

পর্যটক চলাচলে সেন্ট মার্টিনে বাঁশের বেড়ার ‘বিশ্বরোড’

নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৬:০১ পিএম, ২০২২-০৩-১৪

পর্যটক চলাচলে সেন্ট মার্টিনে বাঁশের বেড়ার ‘বিশ্বরোড’

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক চলাচলে বাঁশের বেড়া বিছিয়ে এক কিলোমিটারের ‘বিশ্বরোড’ তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি দ্বীপের দক্ষিণপাড়া থেকে তোলা 
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক চলাচলে বাঁশের বেড়া বিছিয়ে এক কিলোমিটারের ‘বিশ্বরোড’ তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি দ্বীপের দক্ষিণপাড়া থেকে তোলা ছবি: প্রথম আলো
ইট-পাথর-সিমেন্টের সড়ক, মহাসড়ক দেখেছেন অনেকে। কিন্তু বাঁশের বেড়া দিয়ে ‘বিশ্বরোড’ তৈরির দৃশ্য কোথাও দেখেছেন? হ্যাঁ, এমনই একটি সড়ক আছে দেশের সর্বদক্ষিণের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকবাহী দেড় শতাধিক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) ও অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করছে। প্রশ্ন আসতে পারে, বাঁশের বেড়া দিয়ে সড়ক কেন?

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। দ্বীপটিতে যেকোনো ধরনের অবকাঠামো (হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ, রাস্তাঘাট) নির্মাণ নিষিদ্ধ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত এক দশকে দ্বীপে নির্মিত হয়েছে ১৮৮টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। আগে দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশে হোটেল-রিসোর্ট হলেও পর্যটকের চাপে দ্বীপের দক্ষিণাংশেও এর নির্মাণ ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সড়কটি তৈরি করেছেন। বাঁশের বেড়ার সড়ক দিয়ে চলাচল করতে প্রতিটি টমটমকে ৫০ ও মোটরসাইকেলকে ১০ টাকা ইজারা দিতে হয়। সড়কের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশের বেড়ার সড়ক দিয়ে চলছে অসংখ্য পর্যটকবাহী টমটম ও মোটরসাইকেল। টমটম তিন থেকে চারজন আর মোটরসাইকেল সর্বোচ্চ তিনজন নিয়ে চলাচল করছে। বাঁশের বেড়ার দুই পাশে ঝোপঝাড়। তার পেছনে লোকজনের বসতি, বেশ কিছু রিসোর্ট ও কটেজ। বেড়ার নিচে বালু, তার নিচে প্রাকৃতিক পাথরখণ্ড। আগে এ সড়কে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হতো। পর্যটকদের টানতে স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁশ দিয়ে বেড়া বানিয়ে রাস্তার ওপর বিছিয়ে দিয়েছেন। বাঁশের বেড়ার এ সড়কের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিশ্বরোড’।

বিশ্বরোডের এ অংশ পড়েছে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ইউপি সদস্য নাজির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিন হাসপাতাল থেকে দ্বীপের মধ্যভাগ দিয়ে একেবারে দক্ষিণ মাথায় যাতায়াতে কাঁচা সড়ক আছে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার। সড়কটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু সড়ক’। কয়েক বছর আগে হাসপাতাল থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় ‘মেরিন পার্ক’ ও ‘নীল দিগন্ত রিসোর্ট’ পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকা হয়েছে। আরও সাড়ে ছয় কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা পড়ে আছে। সড়কের দুই পাশে ও দ্বীপের দক্ষিণেও বহু রিসোর্ট-কটেজ তৈরি হয়েছে। সেখানে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়ছে। কাঁচা রাস্তায় পায়ে হেঁটে সেখানে যেতে হয়। তখন দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধায় কাঁচা সড়কটি পাকা করা যাচ্ছে না। পর্যটকদের দুর্ভোগ লাঘবে বাঁশের বেড়া দিয়ে সড়কটি বানানো হয়েছে।

নাজির হোসেন আরও বলেন, স্থানীয় লোকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সড়কটি তৈরি করেছেন। বাঁশের বেড়ার সড়ক দিয়ে চলাচল করতে প্রতিটি টমটমকে ৫০ ও মোটরসাইকেলকে ১০ টাকা ইজারা দিতে হচ্ছে। সড়কের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। বেড়া তৈরির বাঁশ আনতে হয়েছে সুদূর টেকনাফ থেকে। দেখা গেছে, বাঁশ কেটে প্রথমে ৩০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা বেড়া তৈরি করা হয়েছে। সড়কের ওপর অন্তত ২০০টি বেড়া বিছিয়ে তৈরি হয়েছে বিশ্বরোড। বেড়ার ওপর দিয়ে যানবাহন পারাপারে সমস্যাও হচ্ছে না। দ্বীপে টমটম, মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ হলেও চলছে। টমটম, মোটরসাইকেল ছাড়া ভারী যান চলাচল চোখে পড়েনি।

বিশ্বরোড হওয়ার পর তাঁদের এলাকায় (দক্ষিণপাড়া) পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। বহু রিসোর্ট-কটেজ তৈরি হচ্ছে।
কাঁচা রাস্তা পাকা হলে আরও উন্নতি হতো 
আবদুল মজিদ, স্থানীয় কৃষক
স্থানীয় কৃষক আবদুল মজিদ (৫৫) প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বরোড হওয়ার পর তাঁদের এলাকায় (দক্ষিণপাড়া) পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। বহু রিসোর্ট-কটেজ তৈরি হচ্ছে। কাঁচা রাস্তা পাকা হলে আরও উন্নতি হতো।

কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে প্রায় ১১ হাজার মানুষের বসবাস। বর্তমানে ১০টি জাহাজ ও ৫০টির বেশি স্পিডবোট ও ট্রলারে দ্বীপটিতে যাচ্ছেন দৈনিক পাঁচ হাজার পর্যটক। ছুটির সময় এ সংখ্যা বেড়ে হয় তিন গুণ। তখন দ্বীপটিতে ‘গিজগিজ’ অবস্থা বিরাজ করে, হোটেল-রিসোর্টেও ঠাঁই মেলে না।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক চলাচলে বাঁশের বেড়া বিছিয়ে এক কিলোমিটারের ‘বিশ্বরোড’ তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি দ্বীপের দক্ষিণপাড়া থেকে তোলা
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক চলাচলে বাঁশের বেড়া বিছিয়ে এক কিলোমিটারের ‘বিশ্বরোড’ তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি দ্বীপের দক্ষিণপাড়া থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো
সেন্ট মার্টিন অটোরিকশা, মিনি টমটম ও ভ্যানমালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, সমিতিভুক্ত টমটম আছে ১৩০টি। এর বাইরে আছে ১৭০টির বেশি। কিন্তু এত টমটম চালানোর জন্য পর্যাপ্ত পাকা রাস্তা নেই। দুই বছর আগেও দ্বীপে টমটম ছিল না। ভ্যানগাড়ি দিয়ে পর্যটকেরা চলাচল করতেন। তখন ভ্যানগাড়ি ছিল ১৮৬টি। এখন আছে মাত্র ১০টি।

দেখা গেছে, সৈকতের বালুচর দিয়ে পর্যটক নিয়ে টমটম ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। তাতে কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। টমটমচালকেরা পর্যটকদের কাছ থেকে ভাড়াও নিচ্ছেন ইচ্ছেমতো। সেন্ট মার্টিন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের প্রায় ছয় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার উন্নয়নে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধায় এক বছর ধরে সেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সড়ক না থাকায় পর্যটকদের যাতায়াতে সৈকতের বালুচর ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

কয়েক ইউপি সদস্য জানান, দ্বীপে বর্তমানে তিন শতাধিক টমটম ও ১২০টি মোটরসাইকেল আছে। সাইকেল আছে ৫৩০টি। ঘণ্টায় মোটরসাইকেলভাড়া ৫০০ আর সাইকেল ৬০ টাকা। ছোট্ট দ্বীপে এসব যান চালানোর জায়গা নেই। হাঁটার রাস্তায় যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে থাকলে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের হাঁটার জায়গা থাকে না। সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টমটম ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্ট মার্টিন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন দ্বীপের দক্ষিণাংশে লোকজনের যাতায়াতও নিষিদ্ধ। সেখানে পাকা সড়ক বানানো প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হওয়ায় ইতিমধ্যে সেখানে রিসোর্ট-কটেজ তৈরি হচ্ছে। কিছু রিসোর্ট-কটেজ ভেঙে ফেলা হয়েছে, জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। সরকার এখন পর্যটক সমাগম সীমিত করে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে দ্বীপের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৩ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন সেই পথেই হাঁটছি।’

রিটেলেড নিউজ

জেলাজুড়ে লাইসেন্সহীন ড্রাইভারের ছড়াছড়ি

জেলাজুড়ে লাইসেন্সহীন ড্রাইভারের ছড়াছড়ি

সুব্রত আপন, স্টাফ রিপোর্টার: : আমাদের দেশে যারা সড়কপথে চলাচল করেন, বলা চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা তা করে থাকেন। সড়ক যেন এখন মরণ ফা...বিস্তারিত


 বড়শিতে ধরা পড়ল ৩০ কেজির জোড়া কোরাল

বড়শিতে ধরা পড়ল ৩০ কেজির জোড়া কোরাল

টেকনাফ প্রতিনিধি : : কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদে এক জেলের বড়শিতে ধরা পড়েছে বড়শি দিয়ে বড় আকারের এক জোড়া কোরাল।  ৩০ কেজ...বিস্তারিত


‘সুনীল অর্থনীতির জন্য সমুদ্র রক্ষা জরুরি’

‘সুনীল অর্থনীতির জন্য সমুদ্র রক্ষা জরুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক :    প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সমুদ্র জয় করেছি। এটা আমাদের বিশাল অর্জন। তাই সমুদ্র পরিষ্কার ...বিস্তারিত


রামুতে তেলের ট্যাংকে মিললো ৩৯ হাজার ইয়াবা

রামুতে তেলের ট্যাংকে মিললো ৩৯ হাজার ইয়াবা

রামু প্রতিনিধি :: : কক্সবাজারের রামুতে পিকআপের তেলের ট্যাংকে অভিনব কায়দায় রাখা ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করেছে গোয়েন্...বিস্তারিত


কক্সবাজারে বনের জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে ‘ডাকাত’ নিহত

কক্সবাজারে বনের জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে ‘ডাকাত’ নিহত

চকরিয়া প্রতিনিধি: : কক্সবাজারের চকরিয়ায় বনের জমি দখল-বেদখল নিয়ে ডাকাত দলের দু'পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আমির হোসেন (৪...বিস্তারিত


উখিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন জন গ্রেফতার 

উখিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন জন গ্রেফতার 

উখিয়া প্রতিনিধি : কক্সবাজারের উখিয়া থেকে এক লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন কারবারিকে আটক করেছে র‌্যাব। রোববার (২২ মে) ...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

ক্যালিফোর্নিয়ায় আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চট্টগ্রামের মেধাবী সন্তান প্রিয়ম চক্রবর্তীর যোগদান

ক্যালিফোর্নিয়ায় আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চট্টগ্রামের মেধাবী সন্তান প্রিয়ম চক্রবর্তীর যোগদান

আমাদের ডেস্ক : : ডেস্ক রিপোর্ট :: চট্টগ্রামস্থ  লোহাগাড়ার  কৃতি সন্তান প্রিয়ম চক্রবর্তী ক্যালিফোর্নিয়ায় ...বিস্তারিত


সদরের পি এম খালী ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী কেফায়ত উল্লাহর ঈদ শুভেচ্ছা

সদরের পি এম খালী ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী কেফায়ত উল্লাহর ঈদ শুভেচ্ছা

আমাদের ডেস্ক : : সদরের পি এম খালী ইউনিয়নের বর্তমান জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম মাস্টারের ভাগিনা পিএমখালী ব...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর